রুপসী অফার

বাংলার রূপ (এপ্রিল ২০১৪)

আল মোমিন
  • ১১
প্রতিদিনের মতো আজও ঘুম ভাঙ্গলো মুরাদ ভাইয়ের বকুনি শুনে কিন্তু আজকের দিনটা একটু ব্যতিক্রম। কারন আজ আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ন কাজ আছে। একজন ফরাসিকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তাই একটু বেশী গুরুত্ব দিয়ে মুরাদ ভাই আমাকে বললেন ‘ভাই তারাতারি উঠে প্রস্তুত হয়ে যাও, উনি বাঙালী না যে তুমি দেরী করে যাবে আর উনি তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।’ তাই লাফ দিয়ে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে বের হয়ে পড়লাম। প্রথমে অফিসে গেলাম। ফ্রান্সের লেস লিলাসে আমাদের অফিস। রয়েল বেঙল টুরিজম নামে মুরাদ ভাইয়ের ট্রাভেল এজেন্সিটা কিছু দিন পর এক বছরে পা রাখবে। তাই প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমরা একটা নতুন অফার ছেড়ছি, যা রূপসী অফার নামে বিশেষ প্যাকেজ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের বিশেষ সুবিধা হলো ভাগ্যবান একজন ফরাসি নব দম্পতি পাবে ছয় দিন সাত রাতের একটি ভ্রমন সুযোগ, কিন্তু সেটা বাংলাদেশে।আর সেই ভাগ্যবান দম্পতি নির্বাচন করা হবে একটি ছোট্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যার দায়িত্বে আছি আমি আর লি অর্পিলা ডিক্রোস।পুরুষ হলে আমি খুব সহজেই অনুপ্রাণিত করতে পারতাম কিন্তু উনিতো একজন নারী। একজন নারীকে অনুপ্রাণিত করা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। দেখাযাক কি হয়? মনে কিছুটা স্নায়ুবিক চাপ অনুভব করতে পারলাম।একজন ফরাসিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে উপলব্দি করানো এমনিতেই কঠিন কাজ তার উপর আবার নারী? ভাবতে ভাবতে চলে এলাম অর্পিলার বাসার একদম দরজার সামনে। কলিং বেলে চাপ দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দরজা খুলে বললেন‘আর উ মিথুন?’ আমি বললাম ‘ইয়েস,আই কেম ফ্রম রয়েল বেঙ্গল ট্যুরিজম।’তারপর তো আমি রিতীমতো অবাক,আর অবাক হবোই না কেন একজন ফরাসী নারী পুরাপুরি বাংলায় কথা বলছে।আমার জায়গায় যে কেউ অবাক হয়ে যেত।একটা শব্দও এদিক সেদিক নয়, প্রতিটা শব্দই শুদ্ধ ও সঠিকভাবে বলছে।‘হ্যা, ভিতরে আসুন।মুরাদ ভাই আমাকে বলেছিলেন আপনার আসার কথা, আসুন বসে কথা বলা যাক।’আমি তো শুনেই স্তব্দ হয়ে গেলাম।নিজেই নিজের গায়ে একবার চিমটি কেটে নিলাম, না ঠিকই তো আছে আমি তো স্বপ্নে না সত্যিই উনার মুখে বাংলা শুনছি।যাহোক সব ভ্রম কেটিয়ে ভিতরে গেলাম।ভিতরে তো আরো অবাক হওয়ার মতো কান্ড।তাঁর বসার ঘরের প্রতিটি দেওয়ালে বাংলাদেশের পর্যটন জায়গা গুলোর ছবি টানানো।আমিতো ভেবেই নিলাম উনার বাবা অথবা মা দু’জনের একজন হয়তো বাঙালী।কিন্তু কিছুক্ষন পর পুরো বেপারটাই উলটাপালটা হয়ে গেল, যখন লি অর্পিলা ডিক্রোসের সাথে কথা বলা শুরু করলাম।ঘড়ি ধরে পাক্কা পয়তাল্লিশ মিনিট কথা হলো উনার সাথে, পুরোটা সময় জুড়ে বাংলায় কথা বললেন একটাও ফরাসি শব্দ ব্যাবহার করেননি।তার উপরে আবার আপ্যায়নে ছিলো বাঙালী খাবার।গুড়-মুড়ি, চিড়ার মোয়া,নারিকেলের নাড়ু, এবং পাটিশাপ্টা পিঠা।আমিতো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, ফ্রান্সের কোনো ফরাসী নারীর বাসায় বসে নাস্তা করছি আর কথা বলছি। মনে হলো যেন আমি আমার দেশে কোনো আত্নীয়ের বাসায় নাস্তা করছি।উনার প্রথম কথাই ছিলো এরকম, আপনি নিশ্চয় অবাক হয়েছেন!অবাক হওয়ার কিছু নেই,আমি ছয় বছর বাংলাদেশে ছিলাম।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষাতে স্নাতক করেছি।সুতরাং আমি বাংলাদেশ কে অনেকটা জানি, আর বাংলাদেশ এখন আমার স্বপ্নের দেশ।তারপর ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ও দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে বলা শুরু করলেন।আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো এক পলকে শুনে গেলাম।মনে হলো যেন বাংলাদেশ কে নতুন করে চিনছি, কারো মুখ থেকে নতুন কোনো দেশের রুপকথার কাহিনী শুনছি।এ যেন পুরোনো চোঁখ দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশকে দেখা।শুরু হয়ে গেল নতুন করে বাংলাদেশকে দেখার যাত্রা।যাত্রা পথের শুরুতে পরিচিত হলাম টি এস সি এর সাথে, তারপর কার্জন হল, মধুর ক্যান্টিন,বধ্যভূমি।ধীরে ধীরে যুক্ত হলো সব পর্যটন স্থানগুলো।নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর কপোতাক্ষ নদ আমার খুব ভালো লেগেছে।অনেক ঘুরেছি বান্দরবন, খাগড়াছড়ি আর রাঙ্গামাটির পাহাড়িয়া এলাকায়।যতোবার গিয়েছি মনে হয়েছে যেন এক স্বর্গপূরীতে এসেছি।মাঝে মধ্যে ইচ্ছা করতো এখানে ঘর-বাড়ি করে স্থায়ী হয়ে যাই। ইচ্ছা আছে জীবনের শেষ সময়টা ওখানেই পার করার।তারপর সুন্দরবন একটি অনন্য জায়গা আমার দেখা মতে।ও হ্যা, কক্সবাজারের কথা তো বলতে ভুলেই গেলাম, পৃথিবী সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত যে বাংলাদেশে আমি না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।এতো সুন্দর সমুদ্র আমি আর একটাও দেখিনি।সৈকতে বসে অনায়াসে সারা দিন পার করে দেওয়া যায়।সময় কিভাবে চলে যায় বোঝাই যায় না।এছাড়া আরো কতো কি!আপনি তো সবই জানেন, তারপরও বলি বাংলাদেশের মানুষের মতো এমন সহজ, সরল এবং অতিথীপরায়ণ মানুষ বিশ্বে আর পাওয়া যাবে না।বাঙালী জাতি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি।সত্যিই বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ, সকল দেশের রাণী।আর সবশেষে এই বলে শেষ করলো ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ তারই সাথে সাথে আমারো মন্ত্র ভাঙলো।তারপর প্রতিযোগীতার বিষয় গুলো বুঝিয়ে দিয়ে আমি বিদায় নিলাম।লি অর্পিলা ডিক্রোসের বাসা থেকে বের হতে হতে শুধু এতটুকু মনে হলো আজ আমি গর্বিত, গর্বিত বাঙালী বলে, গর্বিত এমন একটা দেশে জন্মগ্রহন করতে পেরে যে দেশ সকল দেশের রাণী।যে দেশ এক ফরাসী নারীর শুধু মন কেড়েই ক্ষান্ত হয়নি তাঁর শেষ ইচ্ছাতে জায়গা করে নিয়েছে।নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠলাম ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো............।।’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী দারুন এক গল্প দাদা। পুরোটা পড়ে অন্য রকম লাগলো। যদিও সে সময় আমার পক্ষে ভোট দেয়া সম্ভব হয়নি তবুও অশেষ শুভকামনা রইলো।
F.I. JEWEL N/A # অনেক সুন্দর একটি লেখা ।।
নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ ) বেশ ভালো লাগলো লেখকের অনুভুতির পরকাস পেল বিদেশী চরিত্রের ভিতরে ।সুভেচ্ছা।
প্রজ্ঞা মৌসুমী গল্পের শুরুটা আমার ভালো লেগেছে। গল্পের পরিবেশ বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। কিন্তু লি অর্পিলার বাঙলাদেশ প্রীতি একটু চোখে লাগলো- ফ্রান্সে এতসব মনোরম প্রাকৃতিক (breathtaking place) তারপরও তিনি মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশকে সবচেয়ে সুন্দর দেশ বলছেন। পড়ে মনে হচ্ছিল এটাকি অভিজ্ঞতা থেকে লেখা নাকি লেখকের কল্পনা থেকে আঁকা ভালোবাসা? তবে এটা ঠিক আমাদের ভাষা সংস্কৃতি এত সমৃদ্ধ যে বিদেশীদেরও মুগ্ধ করে। যাই হোক, প্রথম লেখা হিসেবে অনেক ভালো হয়েছে। লেখার আরো সমৃদ্ধ হবে- এই শুভ কামনা
মিলন বনিক যে দেশ এক ফরাসী নারীর শুধু মন কেড়েই ক্ষান্ত হয়নি তাঁর শেষ ইচ্ছাতে জায়গা করে নিয়েছে।... সুন্দর একটা গল্প উপহার দেওয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ...
biplobi biplob Valoiy likasan golpoti.
নাফিসা রহমান ভালো লাগলো... শুভকামনা রইল...
ভালো লাগলো জেনে খুশী হলাম।ধন্যবাদ।আপনার প্রতিও শুভকামনা রইলো।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু চমৎকার শিক্ষণীয় গল্প। খুব ভালো লিখেছেন। শ্রদ্ধা জানবেন।
অফুরন্ত ধন্যবাদ লেখক।এটা আমার লেখা প্রথম গল্প, আমি এর আগে কখনো গল্প লিখিনি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো কোনো দিন গল্প লিখতেই পারবো না বা লিখলেও হয়তো ভালো হবে না কিন্তু,আপনার মন্তব্যটি পড়ে মনে অনেক সাহস ও অনুপ্রেরণা পেলাম।আমার জন্য প্রার্থনা করবেন।আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।শুভকামনা রইলো।
সকাল রয় লেখাটি ভালো লাগছিল । প্যারা এবং যতিচিহ্ন হলে দুর্দান্ত হতো। শুভকামনা সবসমযৈর জন্য । আরো লিখুন।
ধন্যবাদ , অসংখ্য ধন্যবাদ লেখক।ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অফুরন্ত ধন্যবাদ রইলো।
দীপঙ্কর বেরা ভাল লাগল
ধন্যবাদ।ভালো লাগলো জেনে খুশী হলাম।শুভকামনা রইলো।

২৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫